হিম হিম বাতাসে শীতকাল আমাদের দরজায় কড়া নাড়া কিন্তু শুরু করে দিয়েছে। সারা বছরেরে রোদ- বৃষ্টি শেষে শীতকাল এক অন্যরকম আমেজ নিয়ে আসে। শীত তার স্নিগ্ধতার পাশাপাশি প্রকৃতি এবং আমাদের ত্বককেও শুষ্ক করে তোলে । ফলে শীত আসতে না আসতেই আমাদের ত্বকে নানা পরিবর্তন এবং সমস্যা দেখা দেয়। ঠোঁট ফাটা, ত্বকের চামড়া উঠা, ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ফেটে যায় অনেকের! মূলত, শীতকালের আদ্র আবহাওয়াই এর কারণ। তাই এই ঋতু বদলের শুরু থেকেই আমাদের ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরী। তাই, এখন থেকেই ত্বকের যত্ন নেওয়াটা জরুরী। আজকে আমরা আলোচনা করব কিভাবে শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে হয় এবং কি কি করা উচিত এসব নিয়েঃ
ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজারঃ
শীত আসতে না আসতেই আমাদের অনেকেই স্কিন এখন থেকেই ড্রাই বা টান ধরতে শুরু করেছে। আর যাদের স্কিন টাইপ ড্রাই তাদের তো কোন কথাই নেই। এর জন্য দরকার প্রোপার ময়েশ্চারাইজেশন। আপনার স্কিন টাইপ যেমনই হোক না কেন শীতকালে আপনাকে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে স্কিন ডিহাইড্রেট হয়ে পরবে যার ফলে অকালে রিঙ্কেল বা বলিরেখা পরার সম্ভাবনা থাকে। তাই, নিজের স্কিন টাইপ অনুযায়ী উপযোগী একটি ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করে দিনে ৩ বার ব্যবহার করুন । ফেইসে ময়েশ্চারাইজার দেওয়ার ভালো সময় হচ্ছে ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পরে। একটি ভালো মানের ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর মুখ মুছে টোনার এপ্লাই করতে হবে, এর মিনিট খানেক বাদে ময়েশ্চারাইজার দিয়ে নিতে হবে। অনেকেরই শীতকালে স্কিনে মেকাপ বা অন্যান্য প্রোডাক্ট ভালোভাবে বসে না। তাই, যেকোন মেকাপ প্রোডাক্ট ইউজ করার আগে ময়েশ্চারাইজার এপ্লাই করে নিলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

বডি লোশন/ বডি বাটারঃ
শীতকালে শুধু মুখের স্কিনই ড্রাই হয়না, হাত-পাসহ সারা শরীরই শুষ্ক হয়ে পরে। তাই, শরীরেও ময়েশ্চারাইজেশনের দরকার! এই শুষ্কতা থেকে বাঁচতে সারা শরীরে বডি লোশন ব্যবহার করতে হবে। আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী একটি ভালো ব্র্যান্ড এবং মান সম্পন্ন বডি লোশন ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া যাদের বডি লোশন ের তেলতেলে ভাব পছন্দ করেন না তারা বডি বাটার ব্যবহার করতে পারেন । বডি বাটার স্কিনের সাথে দ্রুত মিশে যায়, স্কিনকে হাইড্রেট এবং কোমল করতে সাহায্য করে। শীতকালে প্রতিদিন অন্তত দুই বার বডি লোশন বা বডি বাটার ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহারের উপযুক্ত সময় হল গোসলের পর । কারণ, গোসলের ত্বক পরিষ্কার থাকে যার ফলে লোশনের কার্যকারিতা ভালোভাবে পাওয়া যায়। গোসলের পর পর পুরো শরীরে বডি লোশন বা বডি বাটার লাগিয়ে নিতে হবে। এছাড়া রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও লোশন বা বডি বাটার এপ্লাই করা উচিত।

লিপ বামঃ
শীতকালের আরেকটি কমন সমস্যা হল ঠোঁট ফাটা। শীত আসতে না আসতেই অনেকের ঠোট ফেটে যায়, চামড়া উঠা শুরু হয়। কখনই ঠোঁটের চামড়া নখ দিয়ে টেনে তোলা উচিত না, এতে করে রক্ত বের হয়ে যেতে পারে । ঠোটের চামড়া উঠা দূর করতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে লিপ স্ক্রাব তৈরি করে ঠোঁট স্ক্রাবিং করে নিতে হবে। এতে করে ঠোটের মৃত চামড়াগুলো উঠে আসবে। এরপর একটি ভালো লিপবাম বা লিপজেল এপ্লাই করে নিতে হবে। যেসকল লিপবাম বা লিপজেলে হালকা কালার দেওয়া থাকে সেগুলো রেগুলার ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ এটি ব্যবহারের ফলে ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও শীতকালে লিকুইড লিপস্টিক দিলে অনেকেরই ঠোঁট ফেটে যায় বা ক্র্যাক করে। এক্ষেত্রে লিপস্টিক এপ্লাই করার কিছুক্ষণ পূর্বে লিপবাম বা লিপজেল দিয়ে নিলে এই সমস্যা দূর হবে।

অলিভ অয়েলঃ
ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই। অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল ত্বকের যত্নে অনেক ভালো কাজ করে। অলিভ অয়েল থেকে হাত-পা এর রুক্ষতা দূর করে এবং ত্বককে কোমল ও মসৃণ করে। শীতকালে যাদের স্কিন অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে পরে তারা অলিভ অয়েল ব্যবহারে অনেক উপকার পাবেন। অলিভ অয়েল শিশুদের ত্বকের জন্যও নিরাপদ।

এছাড়াও শীতকালে ফেইস এবং বডি স্ক্রাবিং করা উচিত। এতে করে স্কিন থেকে ডেডসেলস পরিষ্কার হবে। আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী ফেইস এবং বডি এর জন্য স্ক্রাব নির্বাচন করবেন। সপ্তাহে ২-৩ দিন স্ক্রাবিং করতে হবে। কিন্তু আপনার স্কিনে যদি ব্রণ/ একনে থাকে তবে স্ক্রাবিং করা থেকে বিরত থাকুন।