যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নারীরাও আজ সমান তালে পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়ছে । কিন্তু , একজন নারীকে বাইরেরে কাজের পাশাপাশি ঘরের কাজেও সমান পরিশ্রম দিতে হয়। অনেক নারীই ঘরে এবং বাইরেরে কাজে ভারসাম্য আনতে হিমশিম খেয়ে যায়। এতে করে তৈরি হয় পারিবারিক অশান্তি এবং ভুল বোঝা-বুঝি । আজকে আমরা আলোচনা করব কীভাবে একজন কর্মজীবী নারী ঘরের এবং বাইরের কাজের সমতা আনতে পারবে তা নিয়েঃ
১। ঘরের কাজের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়াঃ
একটি সংসার নারী এবং পুরুষ দুইজনের সমান পরিশ্রম এবং অবদানে গড়ে উঠে । আমরা একটা উক্তি প্রায়ই শুনে থাকি- “ সংসার সুখী হয় রমণীর গুনে” , কিন্তু এর পরেরে লাইনটি অনেকেরই অজানা- “গুনবান পতি যদি থাকে তার সনে” । অর্থাৎ, ঘরের এবং সংসার সামলানোর দায়িত্ব একজন নারীর একার নয়। একটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুইজনই যখন চাকুরীজীবী, তখন দিন শেষে বাড়িতে এসে সকল কাজ নারীর একার পক্ষে করা কষ্টকর। তাই, দুই জনেরই উচিত নিজ নিজ দায়িত্ব এবং কাজ ভাগ করে নেওয়া। একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রীকে ঘরের কাজে সহায়তা করা কারণ সংসারটা তাদের দুইজনেই। গৃহস্থালি কাজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এভাবে ভাগ করে নিলে সংসারের অশান্তি অনেকটাই কমে যায়।

২। ফ্রোজেন পদ্ধতিতে খাবার সংগ্রহ করাঃ
চাকুরীজীবী মহিলারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভুগে রান্না-বান্না করা নিয়ে। সকালে অফিসে যাওয়ার তাড়ায় অনেকে ঠিক মত নাস্তা করতে পারেন না, দিনের অনেকটা সময় বাইরে কাটানোর পর বাসায় এসে রান্না করাটা কিছুটা ক্লান্তিকর। আবার অনেকে গৃহ পরিচারিকার রান্না খাবার খেতে চান না। এসকল সমস্যা এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে ফ্রোজেন পদ্ধতিতে খাবার সংগ্রহ করা যায়। যেমনঃ কাঁচা সবজি কেটে এবং হাল্কা সেদ্ধ করে এয়ার টাইট কন্টেইনারে ভরে ফ্রিজে রাখা যায় এবং পরবর্তীতে সকল সবজি রান্নার কাজে ব্যাবহার করা যায়। এভাবে সবজি সংগ্রহ করলে তা অনেক দিন ভাল থাকে এবং এতে অনেক সময়ও সাশ্রয় হয়। ঠিক একই পদ্ধতিতে আটার রুটিও সংগ্রহ করা যায়। রুটি বানানোর পরে হালকা সেঁকে প্লাস্টিক কন্টেইনারে ভরে রাখলে তা ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। এভাবে রুটি বানিয়ে সংগ্রহ করে রাখলে সকালে নাস্তা বানানোর কাজটি সহজ হয়ে যায় এবং সময়ও বাঁচে ।

৩। চাকুরীজীবী মায়ের করণীয়ঃ
একজন গৃহিণী মা যেমন সর্বক্ষণ তার সন্তানকে সময় দিতে পারে, চাকুরীজীবী মায়েরা তা পারেন না। তাই চাকুরীজীবী মায়েদের সন্তানদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা উচিত। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের নিজের কাজ নিজে করে ফেলার প্রতি উৎসাহিত করা উচিত। স্বনির্ভর হওয়া মানে এই না যে প্রতিটি কাজ বাচ্চা একাই নিজে করবে, তবে যেগুলো করা সম্ভব সেগুলো যেন সে নিজেই করতে পারে এমন শিক্ষা দিতে হবে। যেমনঃ নিজের স্কুলের ব্যাগ নিজেই গুছিয়ে ফেলা, খাওয়া শেষে হাত ধোয়া, নিজের বই খাতা, টেবিল গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি। এতে করে তারা দায়িত্ববান হতে শিখবেন। অনেক চাকুরীজীবী মায়েরা নিজেদের সন্তানের পড়াশোনা এবং লালন পালনের জন্য গৃহ পরিচারিকার উপর নির্ভরশীল । এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত এবং সন্তানের সকল দায়িত্ব গৃহ পরিচারিকার উপর ছেড়ে দিলে চলবে না। বাচ্চাকে সময় দিতে হবে। অফিস থেকে ফিরে সন্তানের সাথে কথা বলুন, জিজ্ঞেস করুন আজকে কি কি করল সারাদিন, সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন । ছুটির দিনগুলোতে সন্তানকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে পারেন। বাচ্চার লেখা পড়ার দিকেও নজর দিন।

৪। পরিবারের মানুষদের সময় দিনঃ
পরিবারের পারস্পারিক বন্ধন মজবুত রাখার জন্য একে অপরকে সময় দেওয়া খুবই জরুরী । যেহেতু দিনের পুরোটা সময়ই বাহিরে কাটাতে হয় তাই, দিন শেষে বাসায় এসে পরিবারের মানুষদের সাথে একান্তে সময় কাটানো উচিত। রাতে একসঙ্গে খাবার খাওয়া, টিভি দেখা, বৃদ্ধ মা-বাবা অথবা শ্বশুর-শাশুড়ি থাকলে তাদের সাথে কিছুক্ষণ বসে গল্প করার মাধ্যমে পরিবারের সবাইকে সময় দিবেন। এছাড়া মাঝে মধ্যে অফিস থেকে ফেরার সময় বাসার সবার জন্য কিছু গিফট বা পছন্দের জিনিস কিনে নিয়ে আসলেন । এতে করে বাসার মানুষ খুশি হবেন এবং তাদের মনে হবে যে, আপনি তাদের পছন্দের গুরুত্ব দেন। অনেক সময় ক্লান্তির জন্য এসব করা সম্ভব নাও হতে পারে। তখন বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন ।
৫। নিজের যত্ন নেওয়াঃ
কাজ এবং সংসারের পিছে ছুটতে ছুটতে নিজের যত্ন নিতে ভুলবেন না কিন্তু! মনে রাখবেন আপনি নিজে ভালো থাকলে অন্যকেও ভালো রাখতে পারবেন। দিনশেষে কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখবেন। তখন শুধু নিজের পছন্দের কাজটিই করবেন, হতে পারে তা রূপচর্চা বা বই পড়া অথবা পছন্দের মুভি দেখা।
